অসংখ্য নদী, খাল-বিল হাওর বেষ্টিত নেত্রকোনার অন্যতম একটি নদীর নাম মগড়া। নেত্রকোনা জেলা শহরের ওপর দিয়ে প্রবাহিত এই নদী দিন দিন যেন ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হচ্ছে। ময়লা-আবর্জনার স্তূপ জমে মগড়ার এখন মরণদশা। নদীর ভয়াবহ দশায় নদীর পাড়ঘেঁষা বাসিন্দারা ময়লার দুর্গন্ধ ও দূষিত পানির কারণে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ- কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করলেও ময়লা অপসারণ বা নদী খননের কোনো উদ্যোগ নেই তাদের।
একসময় মগড়া নদীর উত্তাল তরঙ্গভরা যৌবন ছিল। নদীর বুক চিরে চলত বড় বড় স্টিমার, লঞ্চ, কার্গো ও নৌকা। ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে এ নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল আজকের জেলা শহর নেত্রকোনা, জেলার ব্যবসা-বাণিজ্য। মগড়া নদীটি শহরের নাগড়া দিয়ে ঢুকে সাতপাই, কালিবাড়ি, নাগড়া, থানার মোড়, ছোটবাজার, মসজিদ কোয়ার্টার, মোক্তারপাড়া, জয়নগর, কাটলী, আরামবাগ, মালনী রোড হয়ে শিবগঞ্জের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। একসময় মগড়া নদীর ওপর দিয়ে অসংখ্য পালতোলা নৌকা ও লঞ্চ চলাচল করত। ভাটি এলাকার মানুষের যাতায়াত, ব্যবসা-বাণিজ্য চলত এ নদীপথে। জেলার অনেক দুর্গম এলাকার সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র উপায় এ নদী। কালের আবর্তে ও খননের অভাবে নদীটির গভীরতা কমে গেছে।
আজ বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, নাগড়া এলাকায় নদীপাড়ের সড়কঘেঁষে নদীতে ফেলা হচ্ছে বাসাবাড়ির ময়লা। জমছে প্লাস্টিকের বোতলসহ আবর্জনার স্তূপ। ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। আরামবাগ এলাকায় নদীর বুকে ময়লার স্তূপে ঘাস ও ঝোপ তৈরি হচ্ছে। সরু খালে পরিণত হয়েছে নদী। বাড়ির পয়ঃনিষ্কাশন ও ময়লা পানি পড়ছে নদীতে।
নাগড়া এলাকার নদী পাড়ের বাসিন্দা গৃহবধূ জবা রাণী সরকার বলেন, ময়লার দুর্গন্ধে বাসায় ঠেকা দায়। ময়লার মাছি বাসায় ঢুকে সব সময় ভন ভন করে। পৌরসভার লোকজনকে বললে তারা শুধু দেখে চলে যায়। ময়লা সরানোর কোনো উদ্যোগ নেই তাদের।
একই এলাকার আরেক বাসিন্দা কাঁকন সরকার বলেন, মাঝে মাঝে ময়লা আগুনে পোড়ানো হয়। এলাকায় নদীর একটি পাকা ঘাট থাকলেও আবর্জনার কারণে পানি দূষিত। গোসল করা যায় না। অথচ কয়েক বছর আগেও এই নদীর পানি দিয়ে চলত গোসল, থালাবাসন ধোয়ার কাজ। স্থানীয় অনেকের দাবি, এলাকায় কোনো ডাস্টবিন না থাকায় তারা বাধ্য হয়ে নদীতে আবর্জনা ফেলছেন।
নেত্রকোনা পৌরসভার স্যানিটারি ইন্সপেক্টর জহিরুল হক খান টিপু বলেন, ‘ময়লা ফেলার জন্য কিছু এলাকায় প্লাস্টিকের ড্রাম দেওয়া আছে। আর কিছু এলাকায় ভ্যানে করে পৌরসভার সুইপাররা ময়লা নিয়ে যায়। বাসাবাড়ির ময়লা নদীতে ফেললে আমাদের কী করার আছে!
নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহন লাল সৈকত বলেন, ‘শহরের মগড়া নদী খননের কোনো প্রকল্প আপাতত আমাদের হাতে নেই।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।